Thursday 23 February 2017

আমার মেধা আমি কাকে ব্যবহার করতে দেবো?

২৩শে ফেব্রুয়ারী ২০১৭
সরাসরি দেখা যায়না বলেই ইলেকট্রনিক্স চিপমেকার ইন্টেল তাদের পণ্যকে বাজারজাত করতে কম্পিউটারের গায়ে লিখে দিয়েছে “Intel Inside”. ঠিক এই ব্যাপারটা F-15 এবং F-16-এর ক্ষেত্রে ঘটলেও কেউ বলে দেয়নি যে এই বিমানগুলির ভেতরের যে জিনিসগুলি এগুলিকে এতো ভয়ঙ্কর করেছে, সেগুলি কাদের তৈরি। এই দু’টি বিমানই একসময় একই ইঞ্জিনে উড়েছে। এই ইঞ্জিনের নাম “Pratt & Whitney F100”. ‘প্র্যাট এন্ড হুইটনি’ কোম্পানি এই ইঞ্জিন তৈরি করেছে, যা ঐ বিমানদু’টির “হার্ট”। যুক্তরাষ্ট্রে গর্ব করার জিনিসগুলির মাঝে এই ইঞ্জিন একটি।

বর্তমান বিশ্বে মার্কিন শক্তির সাথে সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যেসব বিষয়, তার মাঝে একটি হচ্ছে মার্কিন সামরিক শক্তি। সেই সামরিক শক্তির মাঝে আবার চোখ বন্ধ করলে সামরিক বিমানই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আর সেই বিমানগুলির মাঝে যেগুলি সবচাইতে বেশি উচ্চারিত হয়েছে তার মাঝে রয়েছে McDonnell Douglas F-15 এবং General Dynamics F-16. এই বিমানগুলি মার্কিনীদেরকে সারা দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াতে সাহায্য করেছে। ১৯৭০-এর দশকে তৈরি করা এই বিমানগুলি তাদের বয়স দেখাতে শুরু করলেও এখনও সেগুলির কদর কমেনি। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন বিমান শক্তির দাপট এতটাই ছিল যে আকাশে বিমানগুলিকে এখন পর্যন্ত কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। ইউরোপ, রাশিয়া এবং চীন নিজেদের ফাইটার বিমান তৈরি করলেও মার্কিনীদের এই বিমানগুলির মতো ভয়ঙ্কর নাম কুড়াতে সক্ষম হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কোন বিমান কত মানুষ হত্যা করেছে অথবা কত কত সম্পদ ধ্বংস করেছে, অথবা কতগুলি দেশকে ধূলিস্মাত করেছে, সেই হিসেব করলে F-15 এবং F-16 বেশ উপরের দিকেই থাকবে।

কিন্তু যে ব্যাপারগুলি নিয়ে সবচাইতে কম আলোচনা হয়, তা হলো যেগুলি সরাসরি দেখা যায় না। সরাসরি দেখা যায়না বলেই ইলেকট্রনিক্স চিপমেকার ইন্টেল তাদের পণ্যকে বাজারজাত করতে কম্পিউটারের গায়ে লিখে দিয়েছে “Intel Inside”. ঠিক এই ব্যাপারটা F-15 এবং F-16-এর ক্ষেত্রে ঘটলেও কেউ বলে দেয়নি যে এই বিমানগুলির ভেতরের যে জিনিসগুলি এগুলিকে এতো ভয়ঙ্কর করেছে, সেগুলি কাদের তৈরি। এই দু’টি বিমানই একসময় একই ইঞ্জিনে উড়েছে। এই ইঞ্জিনের নাম “Pratt & Whitney F100”. ‘প্র্যাট এন্ড হুইটনি’ কোম্পানি এই ইঞ্জিন তৈরি করেছে, যা ঐ বিমানদু’টির “হার্ট”। F-16-এর বর্তমানে জেনারেল ইলেকট্রিক বা জিই-এর ইঞ্জিন ব্যবহৃত হলেও প্রথমদিকে প্র্যাট এন্ড হুইটনির ইঞ্জিনই ব্যবহৃত হয়েছে। ইঞ্জিন তৈরিতে বহু ইঞ্জিনিয়ারের নির্ঘুম রাত গিয়েছে, স্ত্রীর সাথে হয়েছে ছাড়াছাড়ি, অথবা চিন্তায় চুল পড়ে গিয়েছে সব। আর এসব ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝে যারা ইঞ্জিনের গবেষণার কাজগুলি করেছেন, তাদের কাছ থেকে চাহিদাটাও ছিল অনেক বেশি। আসলে এই গবেষকেরাই মার্কিন এই যুদ্ধবিমানগুলিকে বাকি বিশ্ব থেকে এগিয়ে রেখেছিলেন। এই গবেষকরাই তাদের নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মার্কিন সামরিক শক্তিকে উপরে থাকতে সহায়তা করেছেন। অথচ এই গবেষকদের নাম খুব কমই শোনা যায়। এমনই একজন গবেষকের নাম আব্দুস সাত্তার খান।
১৯৪১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খাগাতুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী বিজ্ঞানী আব্দুস সাত্তার খান। ১৯৭৮ সালে নিকেল ও তামার সংকর ধাতু নিয়ে গবেষণায় যখন তিনি প্রভূত অগ্রগতি অর্জন করেন, তখন ইঞ্জিন তৈরির কোম্পানি 'প্র্যাট এন্ড হুইটনি' তাকে টেনে নেয়। তিনি সেখানে “Pratt & Whitney F100” ইঞ্জিন নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই সংকর ধাতুর কাজটি জেট ইঞ্জিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা কিনা কপি করা খুব কষ্টকর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত উতকর্ষতা বলতে যা বোঝায়, তার মাঝে একটি হচ্ছে এই সংকর ধাতুর প্রযুক্তি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে F-15 এবং F-16-এর ইঞ্জিন

অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার খানের জন্ম ১৯৪১ সালে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খাগাতুয়া গ্রামে। তাঁকে তৈরি করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ছিলেন রসায়নের ছাত্র। তবে বাংলাদেশকে তিনি কিছু দিতে পারেননি (১৯৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ের সময় ৬১ হাজার ডলারের সহায়তা ছাড়া); দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে। ১৯৭৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এমেস ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে সাত্তার খান এমেস ল্যাবরেটরি ছেড়ে যোগ দেন জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে, যা নাসা লুইস রিসার্চ সেন্টার নামে অধিক পরিচিত। এ সময় তিনি অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংকর ধাতু নিয়ে কাজ করা শুরু করেন, যা কিনা ব্যবহার হয় জেট এবং রকেট ইঞ্জিনে। ১৯৭৮ সালে নিকেল ও তামার সংকর ধাতু নিয়ে গবেষণায় যখন তিনি প্রভূত অগ্রগতি অর্জন করেন, তখন ইঞ্জিন তৈরির কোম্পানি প্র্যাট এন্ড হুইটনি তাকে টেনে নেয়। তিনি সেখানে “Pratt & Whitney F100” ইঞ্জিন নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই সংকর ধাতুর কাজটি জেট ইঞ্জিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা কিনা কপি করা খুব কষ্টকর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত উতকর্ষতা বলতে যা বোঝায়, তার মাঝে একটি হচ্ছে এই সংকর ধাতুর প্রযুক্তি। জেট ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয় বলেই বিশ্বে নিকেল খনিগুলি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ। যাই হোক, প্র্যাট এন্ড হুইটনিতে সাত্তার হয়ে যান চিফ ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৮৬ সালে F-15 এবং F-16 -এর ইঞ্জিনের জ্বালানি খরচ কমানোয় বিশেষ অবদান রাখার জন্য পান ইউনাইটেড টেকনোলজিস (প্র্যাট এন্ড হুইটনির প্যারেন্ট কোম্পানি) স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৪ সালে উচ্চগতিসম্পন্ন জেট বিমানের ইঞ্জিন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অবদানের জন্য ‘ইউনাইটেড টেকনোলজিস রিসার্চ সেন্টার অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স’ পদক লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে পান ‘প্রাট অ্যান্ড হুইটনি’র বিশেষ অ্যাওয়ার্ড। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এই কোম্পানিতে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুস সাত্তার কি করে অতটা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তাঁর আবিষ্কৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা F-15 এবং F-16-এর বোমায় তাঁর পরিবারের কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করবে না? F-15 এবং F-16 যুদ্ধবিমানের বোমায় নিহত হাজারো মানুষের (মূলত মুসলিম জনগণ) আর্তচিৎকারের দায়ভার কি আব্দুস সাত্তার নেবেন? সাত্তারের মতো আর যেসব বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা দিয়েছেন তারাও কি যুক্তরাষ্ট্রের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের দায়ভার নেবেন? হাজারো মানুষের হত্যাকান্ডের অংশীদার হয়ে গর্ববোধ করবেন? কোন আদর্শিক ভাবধারাকে তুলে ধরতে কিছু লোক F-15 এবং F-16-এর ধ্বংসক্ষমতাকে নিজের বলে মনে করে আব্দুস সাত্তার খানকে বাহবা দিয়েছেন? কোন সেই আদর্শ, যাকে তুলে ধরতে লাখো মানুষের লাশের পাহাড় রচনা করা হয়েছে?

বাংলাদেশে অনেক মানুষই আছেন যারা আব্দুস সাত্তারের আবিষ্কার নিয়ে গর্ব করেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের দুনিয়া নিয়ন্ত্রণের সাফল্যের সাথে নিজেদের একাকার করে দিতে চান। এই সাফল্যের মাঝেই তারা আব্দুস সাত্তারকে দেখেন। সবাই হয়তো সেভাবে না দেখলেও কিছু বিষয় নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না। যেমন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীর এক দেশ আরেক দেশে একটি যুদ্ধবিমান (বা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রগামী অন্য কোন অস্ত্র বা ম্যাটেরিয়াল) রপ্তানি করতে পারবে কিনা, সেটা ঠিক করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র; কারণ সেই যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন (বা অন্য কোন অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ) অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হয়ে থাকে। তারা বলে দেন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি জিনিস উমুক দেশে রপ্তানি করা যাবে না; কেননা উমুক দেশের তুমুক মানবাধিকার সমস্যা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ (এবং বিশ্বের অন্যান্য বহু দেশ) কখনও কি চিন্তা করেছে যে বাংলাদেশের মেধা কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার ছিল? বাংলাদেশের মেধা ব্যবহার করে তৈরি যুদ্ধাস্ত্র যখন লাখো মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়, তখন কি কেউ একবারও বলেছেন যে – “এই হত্যাকান্ডের অংশ আমরা হতে চাই না”। কেউ কি বলেছেন যে - “আমাদের মেধাকে আমরা পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেব না”। F-15 এবং F-16 যুদ্ধবিমানের বোমায় নিহত হাজারো মানুষের (মূলত মুসলিম জনগণ) আর্তচিৎকারের দায়ভার কি আব্দুস সাত্তার নেবেন? সাত্তারের মতো আর যেসব বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা দিয়েছেন তারাও কি যুক্তরাষ্ট্রের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের দায়ভার নেবেন? হাজারো মানুষের হত্যাকান্ডের অংশীদার হয়ে গর্ববোধ করবেন?

আব্দুস সাত্তার কি করে অতটা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তাঁর আবিষ্কৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা F-15 এবং F-16-এর বোমায় তাঁর পরিবারের কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করবে না? “Pratt & Whitney F100” ইঞ্জিনের প্রযুক্তি ডেপেলপ করতে গিয়ে তিনি কোন জাতীয়তায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন? যারা আজ আব্দুস সাত্তারের পক্ষে কথা বলছেন, তারা কোন জাতীয়তার? আন্তর্জাতিক সীমানা, ভিসা এবং রঙ্গিন পাসপোর্ট পেরিয়ে তাদের কাছে জাতীয়তা এক উদ্ভট জিনিস হিসেবে হাজির হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপরেও তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে জাতীয়তাকে ব্যবহার করেন। আদর্শিক চিন্তার এই মানুষগুলির কাছে জাতীয়তা একটি ব্যবহারিক যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রশ্ন থাকবে যে তারা কোন আদর্শিক ভাবধারাকে তুলে ধরতে F-15 এবং F-16-এর ধ্বংসক্ষমতাকে নিজের বলে মনে করে আব্দুস সাত্তার খানকে বাহবা দিয়েছেন? কোন সেই আদর্শ, যাকে তুলে ধরতে লাখো মানুষের লাশের পাহাড় রচনা করা হয়েছে? লাশের উপরে স্থাপিত সেই আদর্শের সাফাই গাইতেই তারা F-15 এবং F-16-এর মাঝে সেই আদর্শের রক্ষাকর্তা দেখতে পান। যারা এখনও জাতীয়তা নিয়ে মারামারি করেন, তারা যে চিন্তাচেতনায় কতটা পিছিয়ে রয়েছেন, সেটা বুঝে ওঠার আগেই হয়তো F-15 এবং F-16-এর “আদর্শিক বোমা”য় নিহত হবেন। প্রশ্নটা F-15 এবং F-16 নিয়ে নয়; বরং F-15 এবং F-16 কে ব্যবহার করে কারা দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটা; মানুষের মেধাকে ব্যবহার করে দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক হবে কারা, সেটা। পৃথিবীতে আদর্শিক টানাপোড়েনের এই সময়ে সিদ্ধান্ত নেবার পালা – “আমার মেধা আমি কাকে ব্যবহার করতে দেবো?”
 

----------------------------------------------------------------

অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার খানের ৩১টি প্যাটেন্টের তালিকাঃ

1) Khan, Abdus S, Nazmy, Mohamed,’ MCrAlY bond coating and method of depositing said bond coating’, US patent No. 20050003227 (January 6, 2005)

2) Khan, Abdus S, Fried, Reinhard, ‘ Thermally loaded component of a gas turbine comprises heat insulating ceramic layer used for gas turbine blades’ DE10332938 (February 10, 2005)

3) Khan, Abdus S, Nazmy, Mohamed, ‘ Method of applying a thermal barrier coating system to a superalloy substrate’, W02005038074 (April 28, 2005)

4) Allen, William P, Vernoesi, William, Hall, Robert J, Maloney, Michael J., Appleby, John W, Hague, Douglas D. and Khan, Abdus S. ’Reflective coatings to reduce heat transfer’, US patent No 6,887,587 (May 3, 2005)

5) Khan, Abdus S, Fernihough John, Konter, Maxim, ‘Method of repairing a ceramic coating’, US patent No. 6,890,587 (May 10, 2005)

6) Khan, Abdus S., Konter, Maxim, Schmees, Robert, ‘ Bond or overlay MCrAlY coating’, US patent No. 6,924,045 (August 2, 2005)

7) Fried, Reinhard, Goecmen, Alkan, Khan, Abdus.S, ’ Temperature-stable protective coating over a metallic substrate surface, and a process for producing the protective coating’, US patent No. 6,720,087 (April 13, 2004)

8) Duda, Thomas, Jung, Arnd, Khan, Abdus S, ‘Method of depositing MCrAlY coating on an article and the coated article’, European patent No. EP1411148 (April 21, 2004)

9) Khan, Abdus S., Bossmann, Hans-Peter, Duda, Thomas, Schnell, Alexander, Stefansson, Karl-Johan, Toennes, Christoph T, ‘Method of depositing an oxidation and fatigue resistant MCrAlY coating’, US patent No. 20040079648 (April 29, 2004)

10) Khan, Abdus S., Duda, Thomas, ‘Method of depositing a local coating’, US patent No.20040159552 (August 19, 2004)

11) Khan, Abdus S, Duda, Thomas, Hoebel, Mathias, Schnell, Alexander, ’A method of depositing a local coating’, US patent No. 20040163583 (August 24, 2004)

12) Khan, Abdus S, Boston, Ian W and Hearley, James. A,’ Method of depositing a wear resistant seal coating and seal system’, US patent No.20040185294 (Sept. 23, 2004)

13) Schnell, Alexander, Kurz, Wilfred, Hoebel, Mathias, Khan, Abdus S., Konter, Maxim Bezencon, Cyrille, ‘MCrAlY type alloy coating’, European patent US patent No.20040234808 (November 25, 2004)

14) Schnell, Alexander, Hoebel, Mathias, Kurz, Wilfred, Khan, Abdus S., Konter, Maxim, Bezencon, Cyrille, ‘Method of growing a MCrAlY coating and an article coated with the MCrAlY coating’, US patent No.20040244676 (December 9, 2004)

15) Khan, Abdus S., Fried, Reinhard, ‘Method of applying a coating system’, European patent No. EP1491658 (December 29, 2004)

16) Khan, Abdus S, Fried, Reinhard, ‘Method of applying a coating’, European patent No. EP 1491657 (December 29, 2004)

17) Khan, Abdus S, Duda, Thomas, Schnell, Alexander, Jung, Arnd, ‘A method of depositing a coating’, European patent No. EP 1491650 (December 29, 2004)

18) Fernihough, John, Khan, Abdus S., Konter, Maxim, Oehl, Markus, Dorn, Joachim-Hans, 'Process of repairing a coated component’, US patent No. 6,569,492 (May 27, 2003)

19) Beers, Russell A, Noetzel, Allan A, Khan, Abdus S., ‘Oxidation and fatigue resistant coating’, US patent No. 20030211356 (November 3, 2003)

20) Allen, William P, Vernoesi, William, Hall, Robert J, Maloney, Michael J., Appleby, John W, Hague, Douglas D. and Khan, Abdus S. ’Reflective coatings to reduce heat transfer’, US patent No. 6,652,987 (November 25, 2003)

21) Khan, Abdus S., Zagorski, Alexander, Savell A, Katsnelson, Savell, S, Pozdniakov, Georgij A, 'Method for treating the bond coating of a component’ European patent No. EP1215301 (June 19, 2002)

22) Beers, Russell A, Khan, Abdus S, Noetzel, Allan A, ‘Oxidation resistant coatings for copper’, US Patent No 6,277,499 (August 21, 2001)

23) Mullen, Richard S, Allen, William P, Gell, Maurice L, Barkalow, Richard H., Noetzel, Allan A., Appleby, John W, Khan, Abdus S. 'Multiple nanolayer coating system’, US Patent No. 5,687,679 (November 18, 1997)

24) Khan, Abdus S, Murphy, Kenneth S, Fenton, Richard J, ‘Method for improving oxidation and spallation resistance of diffusion aluminide coatings’, W09530779 (November 16, 1995)

25) Khan, Abdus S., 'Non-destructive test for coated carbon-carbon composite articles’, US Patent No. 5,317,901 (June 7, 1994)

26) Khan, Abdus S, Wright, Robert J.’ A method for protecting article from hydrogen absorption by Application of alumina coating’, US Patent No. 5,252,362 (October 12, 1993)

27) Senterfitt, Donald R, Hamner, Larry D., Mullaly, James. R, Khan, Abdus S, Smeggil, John. G, 'Leading edge heat Pipe arrangement’, US Patent No. 4,966,229 (October 30, 1990)

28) Gostic, William J, Khan, Abdus S, Murphy, Kenneth S, 'Oxidation resistant single crystals’ US Patent No. 4,878,965 (November 7, 1989)

29) Hecht, Ralph J, Khan, Abdus S, Barkalow, Richard H, 'Substrate tailored coatings’, US Patent No. 4,758,480 (July 19, 1988)

30) Bourdeo, Girad G, Khan, Abdus S,’ Nickel base superalloy’ British patent No. GB02110240 & FR-2517329 (June 3, 1983)

31) Barrett, Charles A, Lowell, Carl E, Khan, Abdus S, 'A ternary NiCrAl system’, US Patent No. 4,340,425 (July 20, 1982)

No comments:

Post a Comment