Saturday 9 July 2016

আমদানি করা “Trojan Horse” থেকেই জঙ্গীবাদ

০৯ জুলাই ২০১৬
 

যে লাইফস্টাইলের মাঝ থেকে আজ জঙ্গী রিক্রুট হচ্ছে, তা আসলে কতটা স্বাভাবিক? অস্বাভাবিকতাকে স্বাভাবিকতা দান করলো কে? কিভাবে?

কল্পকাহিনী নাকি বাস্তবতা?

হলিউডে সাম্প্রতিককালের নামকরা ডিরেক্টর এম নাইট শায়ামালান। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ডিরেক্টর Sixth Sense মুভি তৈরি করে রাতারাতিই সাড়া ফেলে দেন। তবে তার এরেকটা মুভি সম্পর্কে সবাই হয়তো অবগত নন, যার নাম Unbreakable. এই মুভিতেও এই তরুণ ডিরেক্টর রোমাঞ্চের মূলটা রেখে দেন মুভির শেষের জন্যে। যারা মুভিটা দেখেননি, তাদের জন্যে একটু spoiler হলেও আজকের আলোচনার খাতিরে কিছু কথা বলতে হচ্ছে। মুভিটাতে সুপারহিরো খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে এক লোক নিজেই ভিলেন সেজে ফেলেন। অর্থাৎ এখানে দেখানো হয় যে ভিলেন না থাকলে হিরো কি করবে? Batman Trilogy মুভিগুলিতেও মোটামুটি সেই চিন্তাটাকেই উপস্থাপন করা হয়। আরও বেশকিছু মুভিতে দেখানো হয় যে ভাইরাস তৈরি করা হয় এন্টিভাইরাস বিক্রির উদ্দেশ্যে। এই মুভিগুলো যে মূল চিন্তাটার উপরে ভিত্তি করে গড়া তা হলো – একটা খেলা খেলতে দুইটা পক্ষ লাগে।

হলিউডের মুভিগুলি কল্পকাহিনী হলেও চিন্তাটা কিন্তু কল্পকাহিনী নয়। এই চিন্তা বহু প্রাচীনকালের; যখন থেকে মানুষ নিজের স্বার্থকে সবকিছুর উপরে স্থান দিতে শুরু করে। নিজের শত্রুদেরকে দুই ভাগে ভাগ করে তাদের মাঝে মারামারি লাগিয়ে দিয়ে গোপনে উভয় পক্ষকেই ইন্ধন যোগানো – চিন্তাটা বোঝা গেলেও যখন কেউ এটা কাজে লাগায়, তখন বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই সেটা ধরা সম্ভব হয় না। বুঝতে পারার সুবিধার্থে একটা সত্যিকারের উদাহরণ দেয়া যাক, যা বেশিদিনের পুরোনো নয়। শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময়ে শ্রীলংকার সেনাবাহিনী এবং তামিল টাইগারদের একই ট্রেনিং ক্যাম্পের দুই প্রান্তে ট্রেনিং দেবার ব্যবস্থা করেছিল ইস্রাইল। উভয় পক্ষের উপরেই অস্ত্র এবং নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে ইস্রাইলের ব্যাপক সুবিধা হয়েছিল। দুই পক্ষকে একে অপরের মাঝে লাগিয়ে দিয়ে খেলা উপভোগ করাটা একটা কৌশল, যা ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ থিওরির নামান্তর মাত্র। এতে একজন আম্পায়ার সেজে বসে থাকেন এবং দুই পক্ষ খেলতেই থাকে, খেলতেই থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের শেষ রক্তবিন্দু অবশিষ্ট থাকে। এটা একটা আদর্শিক খেলা (Ideological Game), যার মূলটা গুলশান ৭৯ নম্বরের ঘটনা নিয়ে লিখতে গিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলাম। আজকে বাংলাদেশে এই খেলাটার ‘রুলবুক’ নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই, যা কিনা খেলার আম্পায়ার ঠিক করেছেন, কিন্তু খেলোয়াড়েরা জানেন না!

ইস্রাইলের একই ক্যাম্পে দুই পক্ষকে ট্রেনিং দেয়ার মতোই একই বাড়ির দুই ঘরে ভিলেন এবং হিরোর জন্ম দেয়া হয়েছে। একজনকে দেখিয়ে আরেকজনকে তৈরি করা হয়েছে, যদিও দুজনেই একই বাড়ির, হয়তো একই মায়ের সন্তান! এতে সংসার হয়েছে ধ্বংস; সমাজ হয়েছে নষ্ট; দেশ হয়েছে দুর্বল। এটা ultimate subversion. দুঃখজনক হলেও আমাদের অজান্তেই আমরা এই subversion-এর শিকার হয়েছি; হচ্ছি। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ধূলায় মিশতে বসেছে আজ! আমাদেরকে চিন্তার দিক থেকে যে অথর্ব করে ফেলা হয়েছে, তা এর আগেই লিখেছি। দুর্বল করে তারপরেই এই কাজে হাত দেয়া হয়েছে। কাজেই আমরা এটা ধরতে তো পারিই নাই, বরং এখন ধরতে পারলেও এর থেকে বের হবার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছি না। Subversion-এর মূল চিন্তাটাই হলো একটা জাতিকে দুর্বল করে তারপরে সাহায্যের হাত বাড়ানো এবং হাত ধরতে বাধ্য করা। আর হাত ধরার পরে তারা এই জাতিকে পুরোপুরি ধ্বংসের দোড়গোড়ায় নিয়ে যাবে। এই ক্রাইসিসের সমাধান কি করে হবে, সেটা বোঝার আগে সমস্যাটা কিভাবে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
 
সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তানদের সেলেব্রিটি বানাবার পরে হঠাত হাওয়া হয়ে যাওয়া এবং আটলান্টিকের ওপাড় থেকে তাদের ছবি প্রকাশ হওয়া কি একেবারেই কাকতালীয় ব্যাপার?

খেলার মাঠ তৈরি

শিক্ষিত মেধাবী মধ্য বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত ঘরের একটা ছেলেকে জঙ্গী হিসেবে তৈরি করতে হলে তার জন্যে একটা playing field আগে তৈরি করতে হবে। সেটা তৈরির উদ্দেশ্যে সে সহ তার আশেপাশের মানুষের উপরে কিছু ব্যাপার চাপানো হয়েছে, যা কিনা ওই ছেলেটির সামনে জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছে। যে ছেলেটি নিজেই সেই culture বা lifestyle-এ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, তার সামনে culture-টাকে ‘ভিলেন’ হিসেবে দেখানোটা বেশ সহজই হয়েছে। তার বন্ধুবান্ধব বা ভাই-বোন এমনকি নিজের মাঝেই সেই অন্ধকার উদাহরণ সে দেখতে পায়। যতদিন মাদ্রাসার ছাত্রদের কাছে এই উদাহরণ আনা হয়েছে, ততদিন ব্যাপারটা ক্রাইসিসে রূপ নেয়নি। মাদ্রাসার একটা ছেলে কয়টা মানুষকে চেনে? আর শহুরে মধ্য বা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে বা একটা মেয়ের ফেইসবুক প্রোফাইলে কতজন ফ্রেন্ড থাকে? এভাবে মাদ্রাসার ছেলেটাকে ব্যবহার করে সমাজের যতটা না ক্ষতি করা সম্ভব, তার চাইতে বহুগুণ বেশি ক্ষতি করা সম্ভব মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলেকে বা মেয়েকে টার্গেট করে, কারণ এই দ্বিতীয় ধরণের ছেলে-মেয়েদেরই সমাজে নেতৃত্ব দিতে পারার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এরা নিঃসন্দেহে বড় টার্গেট।

যে ছেলেমেয়েগুলিকে টার্গেট করা হয়েছে, তারা তো রাস্তার পাশের টং দোকানের কাস্টমার নয়। বরং নামীদামী ব্র্যান্ডেড কফিশপ, ভাজা মুরগি বা বার্গার-পিতজার দোকানেই এদের আনাগোণা। পড়াশোনা করেছে নামী এবং expensive প্রাইভেট স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে তাদের। স্পন্সর করে দেশের এম্বাস্যাডর হিসেবে দেখানো হয়েছে এদের। বিদেশী সেলেব্রিটিদের হাত ধরে স্টেজে উঠে নাচার লোক এরা। হেভিলি স্পন্সরড কালচারাল পার্ফরমেন্স-এর টিভি রিয়েলিটি শো-তে এনে পুরো জাতির সন্মুখে সেলেব্রিটি হিসেবে তৈরি করা হয়েছে এদের। এরাই সেই সেলফি জেনারেশন, যারা কিনা ভাজা মুরগির posh দোকান থেকে গার্লফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে সেলফি তুলেছে ফেসবুকে আপলোড করে অনেক অনেক লাইক পাবার জন্যে। ঘন্টার পর ঘন্টা পার করেছে ফেসবুকে; সময়ের দিকে খেয়াল রাখেনি। বিদেশী সেলেব্রিটিদের লাইভ প্রোগামে যাবার জন্যে উন্মুখ হয়ে থেকেছে; টিকেটের মূল্যের কথা চিন্তাও করেনি। তাদের এই lifestyle-এর কারণে এদেরকে তো মাদ্রাসার কেউ এসে ব্রেনওয়াশ করার প্রশ্নই ওঠে না। এদেরকে তো মসজিদে রিক্রুট করা হয়নি; কারণ এদের lifestyle ছিল পুরোপুরি সেকুলার। যারা টার্গেট করেছে, তারা এদের প্রথমবার ধরেছে এদের interaction point-গুলিতেই। ব্রেনওয়াশ শুরুর সর্বপ্রথম ধাপ এটি। অর্থাৎ শস্যের মধ্যেই যে ভূত ছিল!
 
ট্রয় নগরীর মানুষেরা স্পার্টানদের রেখে যাওয়া কাঠের ঘোড়াখানা না বুঝেই যত্ন করে শহরের ভেতরে টেনে নিয়েছিল। তারা জানতো না যে এর মাঝে ট্রয় নগরী ধ্বংসের লক্ষ্যে লুকিয়ে ছিল স্পার্টার সৈন্যরা।

আমদানি করা “Trojan Horse”

ফেসবুক, কফিশপ, ভাজা মুরগির দোকান, বিভিন্ন লাইভ ইভেন্ট, ইত্যাদি একই সাথে যেমন তাদের রিক্রুট করার জন্যে মূল স্থান হিসেবে কাজ করেছে, ঠিক তেমনিভাবে এই একই culture এবং lifestyle-কে ভিলেন হিসেবে তার সামনে হাজির করে জঙ্গী বানানোর ভিত্তি গড়া হয়েছে। এদের রিক্রুটিং এজেন্টরা এই culture এবং lifestyle-এর সাথেই এসেছে। এরাই সেই এজেন্ট, আদর্শিক শক্তিদের প্রজেক্ট বাস্তবায়নই যাদের উদ্দেশ্য। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে এই culture এবং lifestyle খুব অল্প সময়ের মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে। কল্পনা করেছিলাম কি যে এই আমদানি করা secular lifestyle-এ আসক্ত করে আবার সেটার বিরুদ্ধেই তাদের ক্ষেপিয়ে তুলে জঙ্গী বানিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করা হতে পারে? একবারও কি চিন্তা করে দেখেছি যে ফেইসবুক কালচারকে ব্যবহার করে আমাদের উতকৃষ্ট যুবক-যুবতীদের ধ্বংস করার ব্যবস্থা করা হবে? বিদেশী posh ব্র্যান্ডেড রেস্টুরেন্টের কোন টেবিলে expensive recipe-এর আড়ালে তাদের এজেন্টরা লুকিয়ে থাকতে পারে, সেটা কি আমরা ভেবে দেখেছি একবারও? মেধাবী ছেলে-মেয়েদের স্কলারশিপ দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে বা স্পন্সর করে দেশের এম্বাস্যাডর করে বাইরে পাঠাবার কয়েক মাস পরে বা টিভি রিয়্যালিটি শো-তে সেলেব্রিটি বানানোর কিছুদিন পরে কি করে ছেলে-মেয়ারা গায়েব হয়ে যায় এবং এরপর হঠাত করেই কোন সুইসাইড মিশনের আগে ছবি বা ভিডিওতে তাদেরকে মাথায় পাগড়ি বেধে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, যা কিনা আবার আটলান্টিকের ওপাড় থেকে টুইটারের মাধ্যমে প্রচার করা হয়? এটা কি শুধুই coincidence? ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসি বাস্তবায়নের জন্যে এই culture এবং lifestyle যে “Trojan Horse” হয়ে দেখা দিতে পারে, সেটা কি আমারা স্বপ্নেও ভেবেছিলাম? এখনো ভাবছেন যে কেন এখানে তরুণদের সাথে তরুণীদের কথা বলছি? ইউরোপ থেকে সিরিয়াতে চলে গিয়ে সুইসাইড মিশনে অংশ নেয়া তরুণীদের কথা কি কেউ মনে করতে পারেন? আপনার চেনাজানা সেই Western lifestyle-এ চলা মেয়েটি যে কয়েক মাসের মধ্যেই জঙ্গী হয়ে সুইসাইড মিশনে চলে যাবে না সেটা কি আমরা এখন গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি? অন্তত সারা মুসলিম বিশ্ব থেকে যেসব উদাহরণ আমাদের সামনে আসছে, তাতে আমরা কি করে উদাস থাকতে পারি? মাদ্রাসার ছেলেরা নয়, বরং Secular lifestyle-এ অভ্যস্ত হওয়া উঁচু ঘরের উচ্চশক্ষিত এবং মেধাবী ছেলে-মেয়েরাই আজকে সবচাইতে বড় টার্গেট! এদের জন্যেই খুব যত্ন করে playground তৈরি করা হয়েছে।
 

পত্রিকায় লাইফস্টাইলের নামে কি কি আসবে সেটা কে নিয়ন্ত্রণ করে?

এই “Trojan Horse”-কে যেভাবে আমাদের মাঝে স্থাপন করা হলো…

বিভিন্ন মিডিয়া হাউজের মাধ্যমে প্রডাক্ট ডিজাইন করা হয়েছে এই lifestyle-কে উপরে তুলে ধরার লক্ষ্যে; বিজ্ঞাপন এবং প্রমোশন ক্যাম্পেইন ডিজাইন করা হয়েছে। বেশি টাকা আয়ের লোভে মানুষ ভুলেই গেছে যে নিজের সন্তান এবং ছোট ভাই-বোনদের কোথায় তারা ঠেলে দিচ্ছে। এই subversion পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কৌশলগত স্থানগুলিতে এজেন্ট বসানো হয়েছে এবং ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে বাকিরা এই এজেন্টদের গুরু মেনে অনুসরণ করে যায়। এই lifestyle কতটা সস্তা প্রকৃতির, সেটা সকলেরই জানা; তারপরেও কোন যুক্তিতে সেগুলি শত শত কোটি টাকা খরচ করে promote করা হলো? কে মাথায় ঢুকালো যে এই lifestyle-কে promote না করলে কোন প্রডাক্ট বিক্রি হবে না? কে যুক্তি দিল যে এই lifestyle না নিলে একটা ছেলে বা একটা মেয়ের জীবন বৃথা হয়ে যাবে? একবারও কি প্রশ্ন করে দেখেছি যে বিজ্ঞাপণে যা দেখানো হচ্ছে, তা দেশের বর্তমান অবস্থাকে প্রতিফলিত করে কিনা? আমরা রাস্তায় যা দেখি একই জিনিস কি বিজ্ঞাপণে দেখি? মোট কথা আমরা কি বিজ্ঞাপণে দেশের বর্তমান বাস্তব চিত্র দেখতে পাই? যদি না পাই, তার অর্থ কি এ-ই দাঁড়াচ্ছে না যে বাস্তবতাকে পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যেই এই পণ্য এবং বিজ্ঞাপণগুলিকে ডিজাইন করা হচ্ছে? একটা alien culture and lifestyle-কে দেশের যুবসমাজের উপরে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার জন্যে দেশের মিডিয়া হাউজগুলি কি যারপরনাই চেষ্টা চালাচ্ছে। ফ্যাশন ডিজাইনার, মেকআপ আর্টিস্ট, হাই-এন্ড পার্লার, ইভেন্ট অর্গানাইজার, ফ্যাশন ম্যাগাজিন, দৈনিক পত্রিকার lifestyle supplement-গুলি এবং আরও অনেকে হাতে-হাত ধরে একই লক্ষ্যে কাজ করেছে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আয় করা টাকা দিয়েই আবার এই ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে। অর্থাৎ কই-এর তেলেই কই ভাজা! সেটাও আবার অন্যের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যে?? কি অবাস্তব রকমের অবস্থা, অথচ কেউ একটা টুঁ শব্দটি করে না এই ব্যাপারে? কেন করে না? যাতে এই ব্যাপারে শুধুমাত্র posh কফিশপ ও branded ভাজা মুরগির দোকানের কোণার টেবিলে বসা ওই জঙ্গী রিক্রুটিং এজেন্টই কথা বলার সুযোগ পায় সেই জন্যে? জঙ্গী রিক্রুটিং এজেন্টদের জন্যে এটা কত বড় ব্যাকআপ! সেটাও তৈরি করা হয়েছে এদেশের মানুষেরই কষ্টার্জিত অর্থে??
 
প্রডাক্টের সাথে সাথে আর কি কি মার্কেটিং করা হয়েছে সেটা কি আমরা জানি? এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলার দায়িত্ব আমরা দিয়েছি জঙ্গী রিক্রুটকারীদের হাতে?

প্রত্যেকটা বিজ্ঞাপণে এধরনের lifestyle-এর অন্তত কিছু ছোঁয়া থাকতেই হবে। এই rule কে বা কারা ঠিক করে দেয়? একটা বড় সংখ্যক নাটকেরও এখন একই অবস্থা। আগে সিনেমা তৈরি করা হতো সমাজের নিম্নবিত্তদের জন্যে। অশ্লীলতার নাম করে সেগুলি উতপাটন করা হলো কেন? এখন মধ্যবিত্ত যুবক-যুবতীদের সেই একই সস্তা টনিক যাতে আরও sophisticated-ভাবে দেয়া যায় সেজন্যে? কারণ টার্গেটের priority এখন মধ্য এবং উচ্চমধ্যবিত্ত শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণ-তরুণীরা; সেটাই তো? উপরে এই lifestyle-এর সাথে যায় এরকম যতগুলি interaction point-এর কথা বলেছি, তার সবগুলিই মিডিয়াতে heavily promoted. অর্থাৎ জঙ্গী রিক্রুটিং এজেন্টদের জন্যে যুবক-যুবতীদের constant supply তৈরি করে রাখা হচ্ছে! এই অথর্ব সমাজের একটা প্রশ্ন করার ক্ষমতা নেই যে এই unnecessary and cheap lifestyle কি করে সকলের চোখের সামনে অবাঞ্ছিত ঘোষিত না হয়ে বরং জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে promoted হলো? আমরা কি মনে করতে পারি, এগুলি ঘটার সময়ে আমরা আসলে ঠিক কি করছিলাম? না পারি না। কারণ আমরাও সেই একই lifestyle-এ ডুবে আছি, যার প্রতিদিনের ঘটনার মাঝে কোন ঘটনাই মনে রাখার মতো নয়, যদি না সেটা ফেইসবুকে আপলোড করে রাখা হয়! এরকমই একটা অবস্তব দুনিয়ার ঘোরের মাঝে আমরা আছি যে উপরে বর্ণিত সকল কর্মকান্ড আমাদের নাকের ডগার সামনে দিয়ে বাস্তবায়িত হবার পরেও আমরা paralyzed হয়ে দেখেছি! শুধু তা-ই নয়, আরও আশ্চর্য ব্যাপার হলো সেই অবাস্তব কর্মকান্ডকে আমরা ভালোবাসতেও শিখেছি! কেউ কেউ যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে পারেন যে বোকার কোন শত্রু নেই। হ্যাঁ, সেটা ছাড়া আর কোন ভাষা দিয়ে নিজেদেরকে মূল্যায়ন করার intellectual ability আমাদের আজ নেই!
 
একটা সমাজ ধ্বংস সবচাইতে বড় অস্ত্র হলো এর নারীদেরকে ধ্বংস করা।

এই “Trojan Horse”-এর খপ্পর থেকে বের হতে হবে

ইংরেজীতে একটা কথা আছে – ‘হুক, লাইন এন্ড সিঙ্কার’ (Hook, line and sinker)। যার আভিধানিক অর্থ হলো একটা কাজ সম্পূর্ণভাবে করা। আসলে বরশির আগায় টোপ দিয়ে মাছ শিকারের প্রসেস এটি। এর জন্যে আগে টোপ গেলাতে হয়। মাদ্রাসা থেকে জঙ্গী রিক্রুটের খবর যখন জানা গেল, তখন জঙ্গীবাদ রুখতে আমরা মাদ্রাসা কেন্দ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। যদিও আমদানি করা অবাস্তব lifestyle-কে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, তথাপি আমরা সেটিকে আগের স্থানেই রেখে দিয়েছিলাম। টোপ রেখে দিয়ে মাছকে নিয়ে ব্যস্ত হবার ফল আমরা এখন টের পাচ্ছি। এবার সেই একই অবাস্তব lifestyle-কে টোপ হিসেবেই শুধু নয়, বরং রিক্রুটিং গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে! এখন আমরা কি করবো? টিভির টক শো-তে hand-picked কিছু এজেন্ট এবং অথর্ব লোকদের অর্থহীন কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বকবক শুনে ঘন্টার পর ঘন্টা জীবন থেকে চলে যেতে দেব? নাকি রাষ্ট্রদ্রোহী এই subversion কর্মকান্ড বন্ধ করার চেষ্টা করবো?
 
অবাস্তবকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টার কমতি নেই আজ।

আমাদের কে কি এই আমদানি করা অবাস্তব lifestyle-এ এতটাই addicted করে ফেলা হয়েছে, যাতে নিজেদের সন্তান, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবকে হারিয়েও সেখানেই নিজেদের শান্তিকে খুঁজে ফিরবো? কি অবস্থা তৈরি হলে বাবা তার যুবক ছেলের লাশটাও ফেরত নিতে চায় না একবার ভেবে দেখতে পারেন? সমাজে সন্মানিত এবং ‘জীবনে সফল’ সেই বাবার কষ্টটা আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। এতটাই কি সস্তা হয়ে গেছি আমরা যে মনুষ্যত্ব ভুলে গিয়ে culture এবং lifestyle-এর পুজায় মনোনিবেশ করবো? এটাই সেই “Trojan Horse”, যার মোহে আমরা শুধু intellectually bankrupt-ই হইনি, মনুষ্যত্বকেও হারাতে বসেছি। চিন্তাশূণ্য থাকার কারণে রাষ্ট্রবিরোধী ওইসব কর্মকান্ডকে ভালোবেসে বছরের পর বছর চলতে দিয়েছি! উপরে বর্ণিত এজেন্টদের আদর করে মোটা টাকার পারিশ্রমিক দিয়েছি তাদের subversion সফলভাবে করার জন্যে!! তাদেরকে আইকন বানিয়েছি নিজেদের জন্যে; নিজেদের সন্তানদের জন্যে!! ফলাফল আমরা ভোগ করবো না তো কে করবে?? অধঃপতন অনেক দূর পর্যন্ত হতে পারে, কিন্তু নিজেদের অবস্থানে থেকে অনেক সময়েই অধঃপতনের গভীরতা পরিমাপ করা কষ্টকর। আজ সেই অধঃপতন আমাদের সামনে প্রিয়জনের রক্তাক্ত লাশের আকারে তার গভীরতা দেখাচ্ছে। অদর্শিক শক্তির অশুভ এই প্রজেক্ট থেকে দেশ এবং দেশের তরুণ-তরুণীদের বাঁচাতে হলে আগে আমদেরকে আমদানি করা অবাস্তব সেই lifestyle-রূপী “Trojan Horse”-এর খপ্পর থেকে বের হতে হবে।

No comments:

Post a Comment